বাংলা গানের সত্যিকার প্রিন্সের জন্মদিন আজ
রিপোর্টারের নাম
-
আপডেটের সময় :
রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০২২
-
১৩০
টাইম ভিউ
৯০ দশকের বাংলা ব্যান্ড ও আধুনিক সঙ্গীতে ‘প্রিন্স মাহমুদ’ শুধুই একটি নাম নয়, একটি অধ্যায়ও বটে। ৯০ দশকের একেবারে শুরুতেই যে প্রিন্স মাহমুদ কে আমরা পেয়েছিলাম ‘দ্যা ব্লুজ’ ব্যান্ড এর একজন গিটারিস্ট ও ভোকালিসট হিসেবে, ‘অন্ধকারে মাটির ঘরে চলে যেতে হয় ’, ‘তোমাকে ছাড়া জীবন আমার ’ ‘ ও বন্ধু আমারে ছাড়িয়া যাইও না’ ‘হালজামানার রাজনীতি ভাই’ মতো কিছু প্রিয় ও শ্রুতিমধুর গানে , সেই প্রিন্স মাহমুদ কে ১৯৯৩ সালে ‘রকস্টারস’ নামক মিক্সড অ্যালবামে পাই একজন শিল্পী,ও ৮ টি গানের গীতিকার ও সুরকার হিসেবে। তিনি গান লিখতেন ও সুর করতেন সেটা আগে থেকেই জানতাম তার ‘দ্যা ব্লুজ’ ও ‘ফ্রম ওয়েস্ট’ ব্যান্ড এর অ্যালবাম এর মাধ্যমে।
১৯৯৪ সাল । অডিও বাজারে তখন ব্যান্ড মিক্সড অ্যালবাম এর ২ বছর চলছে। ১৯৯২ সালে ‘আর্ক’ এর দলনেতা, ভোকাল, কিবোর্ডিসট ও জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিচালক আশিকুজ্জামান টুলুর মাধ্যমে ‘স্টারস ১’ এর মাধ্যমে বাংলাদশের অডিও জগতে প্রথম ‘ব্যান্ড মিক্সড’ অ্যালবাম এর যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু ৯৪ সালে প্রিন্স মাহমুদ একই সাথে একই অ্যালবামে হাজির করলেন আইয়ুব বাচ্চু, জেমস, নকিব খান, পার্থ, ফজল, বাবনা ও পপসম্রাট গুরু আজম খান কে। যারা প্রত্যকে তখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে এবং আজ যারা ব্যান্ড সঙ্গীতের কিংবদন্তি হয়ে আছেন। মজার ব্যাপার হলো এরা সবাই ছিলেন সঙ্গীতে তাঁর সিনিয়র বা অগ্রজ যোদ্ধা। আর প্রিন্স মাহমুদ তখন ২০ ঊর্ধ্ব তরুণ । ব্যান্ড সঙ্গীতে যার বয়স মাত্র ৪ বছর চলছে। সেই প্রিন্স মাহমুদ সব গুনিদের এক করে প্রথম অ্যালবামেই করে দিলেন বাজিমাৎ। অ্যালবাম এর ১২ টি গান যেন ১২ টি বারুদ। একটি গানকেও বাতিলের খাতায় বা ভালো না লাগার খাতায় ফেলতে দুঃসাহস কারো নেই।
গানের কথা, সুর, সঙ্গীত সবকিছুই অসাধারন এবং এটা যে প্রিন্স মাহমুদ এর ২য় অ্যালবাম সেটা কেউ বিশ্বাস করবে না। কারণ কথা, সুর, সঙ্গীত ও গায়কী প্রতিটি গানে ছিল নিখুঁত। যে শিল্পীর কণ্ঠে যেমন গান মানায় সেই শিল্পীকে দিয়ে সেই গান গাওয়ানো এবং সবার কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনার মতো কঠিন কাজ প্রিন্স মাহমুদ ভালো ভাবেই পেরেছিলেন । অ্যালবাম এর শিল্পী ও কলাকুশলী সকলে শ্রোতাদের সেরা জিনিসটি দেয়ার ব্যাপারে যে কতটা আন্তরিক ছিলেন সেটা আজকের যারা শিল্পী ও কলাকুশলী তাদের কাছে রূপকথার গল্প মনে হবে। অ্যালবাম এর প্রতিটা গানেই আন্তরিকতা ও যত্নের পরিপূর্ণ ছাপ স্পষ্ট পাওয়া যায়। অ্যালবাম এর গানগুলো হলো আইয়ুব বাচ্চু – ‘পালাতে চাই’, ‘নিহত নারীকে’, ও ‘আমি ও আধার’, পার্থ- হৃদয়হীনা , ফজল – ‘প্রতিমার ছবি ’ ‘সোনালি গিটার’ নকিব খান – ‘তোমাকে নেই প্রয়োজন’ ‘মেঘটাকে দেখেছো’ বাবনার ‘ কেন আমি একা ’ ‘ ব্যথা এবং আজম খান এর ‘ মনকে বোঝাই তুমি কেদো না ‘ গানগুলো। আইয়ুব বাচ্চুর ২টি, জেমস এর একটি ও পার্থের ১টি সহ মোট ৪টি গান ছাড়া বাকি ৮ টি গানের কথা, সুর, সঙ্গীত ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন প্রিন্স মাহমুদ ।
অ্যালবামটি বাজারে প্রকাশ হওয়ার পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বাংলা ব্যান্ড ও অডিও ইতিহাসে শুরু হয়ে যায় একজন ‘যুবরাজ’ নামক প্রিন্স মাহমুদ এর একটি দুর্দান্ত যুগ । যার ফলশ্রুতিতে আমরা ভাগ্যবান স্রোতারা পেয়েছিলাম অসাধারন ও দুর্দান্ত অনেকগুলো গান যার সমান গত অনেক বছর(২০০২- ২০১৫) পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আজকের যারা ব্যস্ত তরুণ জনপ্রিয় গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক আছেন তাঁদের সবাইকে দয়া করে প্রিন্স মাহমুদ এর শুধু ১৯৯৪-২০০১ পর্যন্ত প্রকাশিত অ্যালবামগুলো থেকে শিক্ষা নিতে অনুরোধ করবো কিভাবে ও কতটুকু সৎ থাকলে একজন সঙ্গীত পরিচালক বাঘা বাঘা সব শিল্পীদের কণ্ঠে একের পর এক স্রোতাপ্রিয় ও কালজয়ী গান তৈরি করতে পারেন সেটা জানতে।। শুধু উল্লেখিত সময়ের অ্যালবামগুলো দিয়েই প্রিন্স মাহমুদ বাংলা দেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের ইতিহাসে নিজের অবস্থান চিরদিনের জন্য নিয়ে ফেলেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর লেখা ও সুরে গান করেছেন তানজীর তুহিন।
আজ প্রিন্স মাহমুদ স্যারের জন্মদিন । ১৭ই জুলাই খুলনা বাংলাদেশে জন্ম গ্রহণ করেন ৯০ দশকের জীবন্ত কিংবদন্তী প্রিন্স মাহমুদ । শুভ জন্মদিন স্যার।
আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন
এই বিভাগের আরো খবর