“একজন গিটারের রাজপুত্র ও বাংলা ব্যান্ডের নক্ষত্রের গল্প”
মুকিত
-
আপডেটের সময় :
শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০২২
-
১১৪
টাইম ভিউ
‘আইয়ুব বাচ্চু ‘এই নাম টা বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে শিশু থেকে বৃদ্ধ প্রত্যেক টা মানুষ চিনে ও জানে।এই মানুষ টা কোনো গল্প,উপন্যাস কিংবা কবিতা নয়,এই মানুষ টা নিজেই একজন গল্পকার! যিনি রচনা করেছেন এদেশে বহু কিংবদন্তী দের!এই মানুষ প্রত্যেক টা গান দিয়ে বিভিন্ন বয়সের মানুষ কে পাগল করেছে।এই মানুষ টা ছিলো বাংলাদেশে গিটারের রাজ্যের রাজা।
একটা কথা বলি সহজ ভাষায়,বাংলা ব্যান্ড মিউজিক এর জগৎ টা কে যদি মহাবিশ্ব ধরি তাহলে এই মহাবিশ্বের সবচেয়ে উজ্জলতর নক্ষত্র টি হচ্ছে আইয়ুব বাচ্চু।
আইয়ুব বাচ্চু একাধারে যেমন গায়ক,সুরকার,ইত্যাদি তেমনি তিনি যে গান গুলো গেয়েছেন তার একটা গান ও কেউ বলতে পারবে না যে এই গান টা ফ্লপ!এই মানুষ টা যেখানে গিয়েছে সেখানে বন্যার পানির মতো আমি মানুষ কে তার গান শোনার জন্য তাকে একনজর দেখার জন্য পাগল হতে দেখেছি।
এই মানুষ টা ঠিকই বলেছিলো যে সে তার সম্পূর্ণ ক্যারিয়ার দিয়ে তার জানাজার মানুষ জোগার করেছে,কারন যেদিন তিনি চলে গেলেন এই রুপালি গিটার ফেলে সেদিন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম,টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া,দেশের ৬৪ টা জেলায় আমি দেখেছি শোকের মাতম।
ঢাকার জানাজায় শরীক হওয়ার সময় আমি নিজ চোখে দেখেছি মানুষের আহাজারি কান্না!তারপর যখন তাকে চট্টগ্রাম নেওয়া হলো তখন দিলাম এক কাপড়েই চট্টগ্রাম এর উদ্দেশ্যে রওনা,সেদিন চট্টগ্রাম পৌছে দেখেছি,ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছে নিথর হয়ে,সেই নিথর ফিরে আসা ঘরের ছেলে কে নেওয়ার জন্য সেদিন প্রত্যেক শ্রেনী পেশা,দলমত নির্বিশেষে সবাই সেদিন এক কাতারে দাড়িয়েছিলো। এই মানুষ টার জন্য সেদিন পুরো দেশ টা যেনো থমকে গিয়েছিলো।এই মানুষ টা কে বহনকারী গাড়িতে এবং বিমানে লেখা ছিলো “কীর্তিমানের মৃত্যু নাই অর্থাৎ Legends never die”।
এই মানুষ কতশত মানুষের বেচে থাকার ব্যবস্হা,দু মুঠো ভাতের ব্যবস্হা করেছে তা আল্লাহ ভালো জানে কিন্ত মানুষ টা কখনো এগুলো অহংকার করে নাই এমনকি রেখেছিলো লোকচক্ষুর অন্তরালে!এই মানুষ টা আমার জীবনে একজন কিংবদন্তীর চেয়েও বেশিকিছু,আমার মনে আছে আমার জীবনের সবচেয়ে চ্যালেন্জিং সময়ে এই মানুষ টা আমার পাশে দাড়িয়েছিলো।আমি প্রতিবছর বাচ্চু ভাই এর জন্য কোরআন খতম করি,কোনো দায়িত্ববোধ থেকে করি না যা করি ভালোবাসা থেকে করি।
বাচ্চু ভাই কি এই দেশের বুকে এখনো পাগলামি করা তার ভক্তগুলো কে দেখে?
এই মানুষ টা গিটারে হাত দিলে গিটারের ছয় তার থেকে যে সূর বের হতো তা আমার কাছে অমৃত!এমনও ঘটনা আছে এই মানুষ টা কে একবার দেখার জন্য হাজার হাজার মানুষ বন্যার মাঝে পানি সাতরিয়ে এসে উপস্হিত হয়েছিলো,এই মানুষ টা ভাঙ্গা হাত নিয়ে একবার কনসার্টে ছয় তারের ঝংকার তুলেছিলো!!!
এই মানুষ টা বিদেশে গিয়ে একটা গিটার দেখতে চেয়ে যখন নিজ দেশের বদনাম বা কুৎসা শুনেছিলো সেদিন এই মানুষ টা সেই গিটারে এমন ঝংকার এমন সূর তুলেছিলো যেনো পৃথিবীর কিংবদন্তী গিটার বাদকেরা, ব্যান্ড গুলো জমা হয়েছিলো তার হাতের আঙুলে,তারপর সে সেই কুৎসা রটানো দোকানিকে বুক ফুলিয়ে কি জবাব দিয়েছিলো জানেন? তিনি বলেছিলো ” যে গিটার আমার দেশ কে অপমান করে আমি আইয়ুব বাচ্চু সেই গিটার দ্বীতিয়বার বাজাই না!”।
তবে একটা অনুরোধ লোফি রিমিক্স বা এই সেই ঘোড়ার ডিম এর নামে বাচ্চু ভাই এর গান কেও অপমান করবেন না,বাচ্চু ভাই এর প্রত্যেকটা গান এর স্কেল, গিটারের ঝংকার, সুর ইত্যাদি এক অনন্য উচ্চতায় রয়েছে যা আমি চ্যালেন্জ দিতে পারি কেউ বাচ্চু ভাই এর গান আজ পর্যন্ত সঠিকভাবে কভার করতে পারে নাই(আমার দেখা মতে,সমালোচনা করবেন আমার? করেন তবে ভদ্রভাবে প্রমান সহ!!)
আমি আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কে সবার আগে শোনাবো গিটারের রাজপুত্র,বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের রাজা আইয়ুব বাচ্চুর গল্প!আমি জানি না বাচ্চু ভাই এর বুকে কেনো এতো অভিমান ছিলো যে আমাদের ছেড়ে উড়াল দিয়েছেন আকাশে!তবে তিনি বেচে থাকবেন সহস্র বছর প্রত্যেকটা অলিতে-গলিতে কোনো পাগলাটে যুবক-যুবতিদের বুকে কিংবা বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া কারও বুকে কিংবা এদেশের প্রত্যেকটা আনাচে-কানাচে।
আপনার সামাজিক মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন
এই বিভাগের আরো খবর