পথচলার ৯ বছরে ‘হেবি মেটাল টিশার্ট’

adminsr
5 Min Read

বাংলাদেশের ব্যান্ড মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে অনবদ্য একটি নাম ‘হেবি মেটাল টিশার্ট’। নতুন গান মানেই ফার্মগেটের ‘হেবি মেটাল টিশার্ট’ এর আউটলেটে প্রিমিয়ার শো। নতুন কিংবা পুরাতন সব ব্যান্ডের মৌলিক গান তৈরিতে সব সময় পাশে থাকে যে প্রতিষ্ঠানটি তার নামই ‘হেবি মেটাল টিশার্ট’। যেটার বাস্তব রূপ দেখতে পাই লাখো তরুণের গায়ে। যেনো তরুণদের প্রিয় ব্রান্ড।

বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে, ক্যাম্পাসে, রাস্তায় কিংবা কনসার্টে অনেকেই তাদের প্রিয় ব্যান্ডের ছবি সংবলিত টিশার্ট পরে উচ্ছাস প্রকাশ করে সব সময়।
প্রিয় গানের দল, প্রিয় টিশার্ট। এই টিশার্ট গুলোকে বলা হয়  ব্যান্ড মার্চেন্টডাইস।
এ দেশে ব্যান্ডের অফিসিয়াল মার্চেন্টডাইস  প্রথমে আনে ‘হেবি মেটাল টিশার্ট’। এই প্রতিষ্ঠানটি ব্যান্ড মার্চেন্টডাইসে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। আর এই বৈপ্লবিক পরিবর্তন ব্যান্ড মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে অনবদ্য অবদান রেখে চলছে। যার জন্য ‘হেবি মেটাল টিশার্ট’ কে বলা হয় ‘ক্রাউডের ব্যান্ড’।
ব্যান্ড মিউজিক ও ‘হেবি মেটাল টিশার্ট’ সম্পর্ক নিয়ে বিডিকালচার২৪.কম প্রতিনিধি  কথা বলেছিলেন হেবি মেটাল টিশার্টের স্বত্বাধিকারী জাভেদ হক এর সাথে।
চলুন আপনার কৌতূহল, অজানা তথ্য  গুলো বিস্তারিত জেনে নিই।
সময় তখন ২০১৩ এক তরুণ তার পছন্দের ব্লাক ব্যান্ডের টিশার্ট কেনার জন্য শহরের অলি গলি খুঁজে বেড়ালো কিন্তু কোথাও ব্যান্ডের লোগো সংবলিত টিশার্ট পেলো না। হতাশা আর আক্ষেপ থেকে সিদ্ধান্ত নিলেন নিজেই টিশার্টে প্রিয় ব্যান্ডের লোগো প্রিন্ট করে নিবেন।  তখন নিজের শখ থেকে  তরুন ব্যান্ড লাভার  টিশার্টে প্রিন্ট করেন ব্লাক ব্যান্ডের লোগো/নাম।
২০১৩ সালের ১৫ ই মে ঢাকাতে অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়।  নতুন এ যাত্রায় অফিসিয়ালি ব্যান্ড মার্চেন্টডাইস ছিলো ‘ট্রেনরেক’। অর্থাৎ ‘হেবি মেটাল টিশার্ট’ এর প্রথম টিশার্ট / মার্চেন্টডাইস ছিলো ‘ব্যান্ড ট্রেনরেক’।
জাভেদ হকের শখ থেকে তৈরি হলো ‘হেবি মেটাল টিশার্ট’। শুরুতে দুইতিন বছর কোনো ব্যবসায়ীক চিন্তা ভাবনা ছিলো না। শখ পূরণ করা ছিলো মূল লক্ষ্য। সবাই প্রিয় ব্যান্ডের টিশার্ট  গায়ে দিবে এটাই ছিলো আনন্দ অনুভূতির জায়গা।
এর পরের পথচলা আরো সহজ ও মজার হয়ে গেলো। ব্যান্ড মিউজিক সিনে অন্য রকম উচ্ছাস তৈরি হলো। জাভেদ হক বিভিন্ন ব্যান্ডের সাথে যোগাযোগ শুরু করলো অফিসিয়ালি মার্চেন্টডাইস বের করার জন্য। ব্যান্ড ও হেবি মেটাল টিশার্ট এর মধ্যে এমন চুক্তি হলো যেনো দুই পক্ষ লাভবান হয়। বিশেষ করে ব্যান্ড। যার ফলে ব্যান্ড গুলো আর্থিক ও মানসিক ভাবে বেশ সম্মানিত হতে থাকলো।
এই পথচলায় জাভেদ হক কিছু মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন, যারা পাশে না থাকলে, এই পথচলা সম্ভব হতো না। তাঁরা হলেন ব্যান্ড ট্রেনরেক থেকে ‘এ কে রাহুল’, ব্যান্ড আর্টসেল থেকে ‘লিংকন ডি কস্টা’, আর্বোভাইরাস থেকে রঞ্জন,  নাফিজ এবং সুফি , শিরোনামহীন থেকে ‘জিয়াউর রহমান’, মেকানিক্স থেকে ‘ত্রিদিব’ ব্যান্ড পাওয়ারসাজ থেকে ‘জামসেদ’,  ওনড ব্যান্ড থেকে ‘একে সামি ‘প্রমুখ ব্যাক্তিবর্গ। আরো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তাদের জন্য যারা এই মার্চেন্টডাইস ক্রয় করেন সেই সব মিউজিক লাভারদের প্রতি৷
২০১৩ – ২০২২ পথচলার ৯ বছরে  ১০০ টির বেশি দেশ বিদেশি ব্যান্ড নিয়ে কাজ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য হলো ব্যান্ড সংস্কৃতিকে ধারন ও লালন করা।
ব্যান্ড সিনে ‘হেবি মেটাল টিশার্ট’ কতটা অবদান রাখছে? এর উত্তরে জাভেদ হক বলেন ২০১৩ সালের আগে এমনকি ৯০ দশকে কোনো ব্যান্ড তাদের গান/এলবাম বের করলে পোস্টারিং করতো শহরের অলিতে গলিতে। যেনো মানুষ তাদের চিনতে পারে, জানতে পারে। কিন্তু টিশার্টে ব্যান্ডের লোগো থাকাতে মানুষ সহজেই ব্যান্ড গুলোকে চিনতে পারে। এমনকি যারা ব্যান্ড চিনতো না টিশার্ট দেখে ইউটিউবে সার্চ দিয়ে ব্যান্ডকে চিনেছে এবং গান শুনছে। আর এখানেই ‘হেবি মেটাল  টিশার্ট’এর স্বার্থকতা।
পথচলার ৯ বছরে প্রতিষ্ঠানটি দেশের মোট ১৩ টি শহরে তাদের আউটলেট দিয়েছে। খুব দ্রুত দেশের ৬৪ জেলায় আউটলেট চলে আসবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার।  বর্তমান আউটলেট গুলো হলো- ফার্মগেট আউটলেট, চট্টগ্রাম আউটলেট, কুমিল্লা আউটলেট, রাজশাহী আউটলেট, খুলনা আউটলেট, সাভার আউটলেট, উত্তরা আউটলেট, ফেনী আউটলেট সহ দেশের বিভিন্ন শহরে মোট ১৩টি আউটলেট সুনামের সাথে ব্যান্ড মিউজিককে রিপেজেন্ট করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে ‘হেবি মেটাল টিশার্ট’  ব্যান্ডের অনুমতি নিয়ে অফিসিয়াল মার্চেন্টডাইস বাজারজাত করেন। অনেকেই কালোবাজারি করে টিশার্ট বিক্রি করে ব্যান্ডকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
এটা প্রতিরোধ করার জন্য নিদিষ্ট নীতিমালা ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। তা না হলে আমাদের ব্যান্ড সংস্কৃতির চর্চাটা সঠিক ভাবে করা যাবে  না। খুব দ্রুত কালো বাজারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জাভেদ হক।
প্রকৃত শুভাকাঙ্ক্ষী ও ভক্তরা যদি সঠিক মাধ্যম থেকে টিশার্ট সংগ্রহ করে তবে ব্যান্ড সংস্কৃতি ভিন্ন মাত্রা পাবে। সাথে সঠিক মাধ্যম থেকে গান শুনতে হবে যেনো ব্যান্ড উপকৃত হতে পারে।
আমাদের দেশের ব্যান্ড সংস্কৃতি একটি গর্বের জায়গা,যেটা জয় বাংলা কনসার্ট দেখলেই বোঝা যায়। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস গুলোতে ব্যান্ড সংস্কৃতির প্রভাব বেশি লক্ষ্য করা যায়।
‘হেবি মেটাল টিশার্ট ‘ এর কর্ণধার জাভেদ হক বলেন প্রিয় ব্যান্ডের টিশার্ট গায়ে দেওয়া শখের ব্যাপার, ভালোবাসা আর ভালোলাগার ব্যাপার। প্রিয় ব্যান্ডকে সাপোর্ট দিতে হলে অবশ্যই অফিসিয়াল মার্চেন্টডাইস কিনে পরতে হবে। । প্রতিষ্ঠানটি ক্রেতাদের স্বার্থ রক্ষার্থে সর্বোচ্চ ভালো মানের টিশার্ট দেওয়ার চেষ্টা করে সব সময়।
ব্যান্ড চাই মানুষ সঠিক মাধ্যম গুলো ব্যবহার করে ব্যান্ডকে উৎসাহ দিবে। তার জন্য সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে আমাদের ব্যান্ড সংস্কৃতি ও তার ঐতিহ্য রক্ষার জন্য।

Share this Article
Leave a comment