এর আভিধানিক অর্থ হল পুনরুজ্জীবন, নবজাগরণ, বা এক কথায়, পুনর্জন্ম। সাহসী, স্বাধীনতাকামী ও অনুসন্ধিৎসু মানুষদের পুনর্জন্ম – যারা শিল্প, সাহিত্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতার স্বাধীন বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে, অভূতপূর্ব বিপ্লব সাধন করে এসেছে যুগ থেকে যুগে, দেশ হতে দেশে।
এমনই কিছু সাহসী, অগ্রগামী তরুণ মিলে, ১৯৮৫ সালে গঠন করে ব্যান্ড – “রেনেসাঁ”, এবং হয়ে ওঠে বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীতের ইতিহাসে এক বরণীয় বিল্পবী ও স্মরণীয় পথিকৃৎ। এর প্রতিষ্ঠিতা সদস্যেরা হলেন – নকিব খান, পিলু খান, এহসানুল ইসলাম, মামুন ও ফয়সাল সিদ্দিকী।
এদেশীয় সুরের সাথে, পশ্চিমা সংগীত ব্যবস্থাপনার এক চমৎকার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে, ব্যান্ডটি তখন নিজেদের মৌলিক গান সৃষ্টির মাধ্যমে, খুব অল্প সময়ের ব্যবধানেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
১৯৮৮ সালে, ব্যান্ডটি তাদের প্রথম সেলফ-টাইটেলড অ্যালবাম – “রেনেসাঁ” প্রকাশ করে, যার মাধ্যমেই তারা সেই সময়ে ব্যাপক খ্যাতি এবং সাফল্য অর্জন করে। “ভালো লাগে জোছনা রাতে”, “ও নদীরে তুই যাস কোথায় রে”, “আচ্ছা কেনো মানুষগুলো”, “ও ছোট্টোবেলার সাথি” – এই সর্বকালের সেরা হিট গানগুলো এই অ্যালবামেরই অন্তর্ভুক্ত।
তাদের দ্বিতীয় এবং আরেকটি ব্যাপক সফল অ্যালবাম – “তৃতীয় বিশ্ব” মুক্তি পায় ১৯৯৩ সালে, যেটির গান – “হৃদয় কাদা মাটির কোনো মূর্তি নয়”, ” আজ যে শিশু”, “চিরদিনই ভাবতে পারো”, “বেঁচে থাকা নিয়ে যাদের যুদ্ধ” শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
তৃতীয় অ্যালবাম “একাত্তরের রেনেসাঁ” মুক্তি পায় ১৯৯৮ সালে, যা নির্মিত হয়েছিলো, কিছু মর্মস্পর্শী দেশাত্মবোধক গান নিয়ে, যেগুলো ছিলো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন অবিস্মরণীয় নিদর্শন। পরবর্তী প্রজন্ম, যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, তাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও পটভূমি, ত্রুটিহীনভাবে তুলে ধরার জন্য, এই অ্যালবামটি ছিলো এক অবিসংবাদিত সৃষ্টি, যা সমালোচকদের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়।
সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডে, “বেস্ট ব্যান্ড অ্যালবাম অফ দ্যা ইয়ার – ২০০৪” এর পুরষ্কার জিতে নেওয়া অ্যালবাম – “একুশ শতকে রেনেসাঁ” তাদের চতুর্থ অ্যালবাম, যেখানে ব্যান্ডের সিগনেচার বঙ্গদেশীয় সুরের সাথে, ব্র্যাস ইন্সট্রুমেন্ট, যেমন – Saxophone, trumpet, trombone, বাঁশি ও হারমোনিকার এক অদ্ভুত সুন্দর সংমিশ্রণ ঘটানো হয়, দীর্ঘকালের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন গুণী শিল্পীদের মাধ্যমে।
রেনেসাঁ প্রকৃতপক্ষেই বাংলার ব্যান্ড সংগীত ইতিহাসের এক বিপ্লবের নাম। যারা শুরুটা শুরু করে গিয়েছিলো, সঠিক পথ দেখিয়েছিলো এবং ফলপ্রসূ নির্দেশনা দিয়ে গিয়েছিলো আগামী প্রজন্মকে।
শ্রদ্ধা রইলো এই অগ্রগামী পথিকৃৎদের প্রতি।
Hats Off!
লেখা : Antora Scholastica Gomes (BBMFC)
তারিখ : ২১ অক্টোবর, ২০২১।
|
|
রেনেসাঁ বা “Renaissance” শব্দটির অর্থ কি বলুন তো?

Leave a comment
Leave a comment